প্রতিষ্ঠাতা
বাণী

আমি শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৫৪ সালে মেট্রিক পাশ করার পর করটিয়া সাদাত কলেজে (টাঙ্গাইল) ভর্তি হই। সাদাত কলেজ ধামরাই হতে ৬০ কিমি. দূরে অবস্থিত। তৎকালীন সময়ে যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকার কারনে উক্ত রাস্তা পায়ে হেটে যেতে হত। ভোর ৬টায় রওনা হয়ে রাত ০৮ টায় পৌছতাম। বইয়ের বুঝা পিঠে নিতাম। আমি ও ধনবাড়ী কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল শুকুর সাহেব একত্রে হেটে যাইতাম। তখনই বলাবলি করতাম এই কষ্ট সহ্য হয় না। যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে সর্ব প্রথম কলেজ করব। যাহাতে আমাদের ছেলেমেয়রা বাড়ী হতে কলেজ করতে পারে। ইনশাল্লাহ সেই সুযোগ পাই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর। ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর বদৌলতে ধামরাই হতে এমপি নির্বাচিত হই। এর পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। আমি আগর তলা ইছামতি ক্যাম্পের চীফ নিযুক্ত হই। সফল ভাবে ক্যাম্প পরিচালনা করি এবং ছেলেদের যুদ্ধে পাঠাই। বিহারের চাকুলিয়া সেনা ছাউনি হতে সামরিক ট্রেনিং গ্রহণ করি। ট্রেনিং শেষে যশোহরের কালিগঞ্জ সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসি এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পূনঃগঠনের কাজে আত্ননিয়োগ করি। মনে পড়ে যায় কলেজে হেটে যাওয়ার কথা। তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন অধ্যাপক ইউছুফ আলী। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় ধামরাই সরকারী কলেজ, পরবর্তীতে যাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তিত হয়। যদিও কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি তবে সফল হয়েছি। আজ যেখানে প্রায় ৫,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত । এর পর আরম্ভ হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখার আরো সুযোগ, একই বছর কুশুরা ও সুয়াপুর কলেজ করি। সুয়াপুর কলেজটি টিকতে পারে নাই। কুশুরা কলেজটি বর্তমানে ড্রিগ্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এই কলেজে নূরুজ্জামান সাহেবের অবদান অপরিসীম। এই ক্ষেত্রে কাজ করা অত্যন্ত আনন্দের। পেয়ে ছিলাম মহান নেতার ছোয়া। যাহাই ধরি তাহাই সফল হয়। নেতাকে বায়না ধরলাম ধামরাইতে অতিরিক্ত ৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক কে ডেকে বললেন, পাগলে ধরেছে, ইউছুফ আলী সাহেব বললেন নেতা এক থানায় এতো? উত্তর পেলেন আমি শেখ মুজিবর রহমান বলছি। হয়ে গেলো অতিরিক্ত ৪০টি স্কুল। এরপর হাই স্কুল ৮টি বাড়িগাও, জালসা, নিকলা, প্রত্যাশা, ধলকুন্ড, খাগাইল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ধামরাই জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয় কে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত। ইহা ছাড়াও আমি ৬টি স্কুলের স্থায়ী দাতা সদস্য। এই গুলো হলো প্রত্যাশা, ধলকুন্ড, কুশুরা হামিদা আফাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাকরান মাদ্রাসা, রোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয় এবং শুলধন মাদ্রাসা। সর্বশেষ আমার নিজ গ্রামে, নিজ নামে হাটিপাড়ায় আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। যাহা অত্র এলাকায় ২২ বছর যাবত শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে । প্রতিষ্ঠালগ্ন হইতে আমি বিদ্যালয়টির সভাপতি। মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা ১,০০০ এর অধিক। বিদ্যালয়টি কলেজে রুপান্তেরের লক্ষে ৪তলা ভবন নির্মাণাধীন। আমার বয়স বর্তমানে ৮৫ বছর। আমার শেষ ইচ্ছা আমার স্কুলের সংঙ্গে মুজিব ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেতাদের জীবনী আলোচনা হবে। আমার বাকী জীবন আমি এখানে কাটাতে চাই।